Thursday, May 17, 2007

দিনের শেষে ঘুমের দেশে (Diner Seshe Ghumer Deshe)

দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা-পরা ওই ছায়া

     ভুলালো রে ভুলালো মোর প্রাণ

ও পারেতে সোনার কূলে আঁধারমূলে কোন্ মায়া

     গেয়ে গেল কাজ-ভাঙানো গান

নামিয়ে মুখ চুকিয়ে সুখ যাবার মুখে যায় যারা

     ফেরার পথে ফিরেও নাহি চায়,

তাদের পানে ভাঁটার টানে যাব রে আজ ঘরছাড়া---

     সন্ধ্যা আসে দিন যে চলে যায়

          ওরে আয়

     আমায় নিয়ে যাবি কে রে

          দিনশেষের শেষ খেয়ায়

 

ঘরেই যারা যাবার তারা কখন গেছে ঘরপানে,

     পারে যারা যাবার গেছে পারে;

ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে

     সন্ধ্যাবেলা কে ডেকে নেয় তারে

ফুলের বার নাইকো আর,

     ফসল যার ফলল না---

চোখের জল ফেলতে হাসি পায়---

     দিনের আলো যার ফুরালো, সাঁজের আলো জ্বলল না,

সেই বসেছে ঘাটের কিনারায়

          ওরে আয়

     আমায় নিয়ে যাবি কে রে

          বেলাশেষের শেষ খেয়ায়

 

সাঁজের বেলা ভাঁটার স্রোতে ও পার হতে একটানা

     একটি-দুটি যায় যে তরী ভেসে

কেমন করে চিনব ওরে ওদের মাঝে কোন্‌খানা

     আমার ঘাটে ছিল আমার দেশে

অস্তাচলে তীরের তলে ঘন গাছের কোল ঘেঁষে

     ছায়ায় যেন ছায়ার মতো যায়,

ডাকলে আমি ক্ষণেক থামি হেথায় পাড়ি ধরবে সে

     এমন নেয়ে আছে রে কোন্ নায়

          ওরে আয়

     আমায় নিয়ে যাবি কে রে

          দিনশেষের শেষ খেয়ায়

Wednesday, May 16, 2007

ও আমার দেশের মাটি (O Aamar Desher Maati)

ও আমার        দেশের মাটি, তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা

তোমাতে        বিশ্বময়ীরতোমাতে   বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা

তুমি              মিশেছ মোর দেহের সনে,

তুমি              মিলেছ মোর প্রাণে মনে,

তোমার ঐ      শ্যামলবরন কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা

ওগো মা,        তোমার কোলে জনম আমার, মরণ তোমার বুকে

                   তোমার 'পরে খেলা আমার দুঃখে সুখে

তুমি              অন্ন মুখে তুলে দিলে,

তুমি              শীতল জলে জুড়াইলে,

তুমি যে          সকল-সহা সকল-বহা মাতার মাতা

ও মা,            অনেক তোমার খেয়েছি গো, অনেক নিয়েছি মা---

তবু              জানি নে-যে কী বা তোমায় দিয়েছি মা!

আমার           জনম গেল বৃথা কাজে,

আমি             কাটানু দিন ঘরের মাঝে---

তুমি              বৃথা আমায় শক্তি দিলে শক্তিদাতা

তোমার সোনার থালায় সাজাব (Tomar Sonar Thalaay)

তোমার   সোনার থালায় সাজাব আজ দুখের অশ্রুধার

    জননী গো, গাঁথব তোমার গলার মুক্তাহার

      চন্দ্র সূর্য পায়ের কাছে   মালা হয়ে জড়িয়ে আছে,

তোমার  বুকে শোভা পাবে আমার দুখের অলঙ্কার

      ধন ধান্য তোমারি ধন কী করবে তা কও

      দিতে চাও তো দিয়ো আমায়, নিতে চাও তো লও

    দুঃখ আমার ঘরের জিনিস,   খাঁটি রতন তুই তো চিনিস---

তোর    প্রসাদ দিয়ে তারে কিনিস এ মোর অহঙ্কার

আগুনের পরশমণি (Aguner Parasmani)

আগুনের     পরশমণি  ছোঁয়াও প্রাণে

এ জীবন     পুণ্য কর  দহন-দানে

আমার এই    দেহখানি  তুলে ধরো,

তোমার ঐ    দেবালয়ের  প্রদীপ করো---

নিশিদিন      আলোক-শিখা  জ্বলুক গানে

আঁধারের     গায়ে গায়ে  পরশ তব

সারা রাত     ফোটাক তারা  নব নব

নয়নের       দৃষ্টি হতে  ঘুচবে কালো,

যেখানে       পড়বে সেথায়  দেখবে আলো---

ব্যথা মোর    উঠবে জ্বলে  ঊর্ধ্ব-পানে

আজ জ্যোত্‍‌স্নারাতে (Aaj Jyotsna Ratey)

আজ   জ্যোত্‍‌স্নারাতে সবাই গেছে বনে

       বসন্তের এই মাতাল সমীরণে

যাব না গো যাব না যে,   রইনু পড়ে ঘরের মাঝে---

       এই নিরালায় রব আপন কোণে

              যাব না এই মাতাল সমীরণে

       আমার  ঘর বহু যতন 'রে

             ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে

আমারে যে জাগতে হবে,   কী জানি সে আসবে কবে

       যদি আমায় পড়ে তাহার মনে

              বসন্তের এই মাতাল সমীরণে

তুমি কেমন করে গান করো (Tumi Kemon Kore Gaan Karo)

তুমি     কেমন করে গান করো হে গুণী,

আমি     অবাক্ হয়ে শুনি কেবল শুনি

   সুরের আলো ভুবন ফেলে ছেয়ে,

   সুরের হাওয়া চলে গগন বেয়ে,

   পাষাণ টুটে ব্যাকুল বেগে ধেয়ে

           বহিয়া যায় সুরের সুরধুনী

     মনে করি অমনি সুরে গাই,

     কণ্ঠে আমার সুর খুঁজে না পাই

   কইতে কী চাইকইতে কথা বাধে---

   হার মেনে যে পরান আমার কাঁদে

   আমায় তুমি ফেলেছ কোন্ ফাঁদে

           চৌদিকে মোর সুরের জাল বুনি

বিপদে মোরে রক্ষা করো (Bipadey Morey Rokkha Karo)

বিপদে মোরে রক্ষা করো  নহে মোর প্রার্থনা---

     বিপদে আমি না যেন করি ভয়

দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে নাই বা দিলে সান্ত্বনা,

     দুঃখে যেন করিতে পারি জয়

সহায় মোর না যদি জুটে   নিজের বল না যেন টুটে---

     সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতিলভিলে শুধু বঞ্চনা,

        নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়

আমারে তুমি করিবে ত্রাণ  নহে মোর প্রার্থনা---

        তরিতে পারি শকতি যেন রয়

আমার ভার লাঘব করি নাই বা দিলে সান্ত্বনা,

        বহিতে পারি এমনি যেন হয়

নম্রশিরে সুখের দিনে   তোমারি মুখ লইব চিনে---

     দুখের রাতে নিখিল ধরা যে দিন করে বঞ্চনা

        তোমারে যেন না করি সংশয়